বিনামূল্যে বোতলজাত পানি

© বিনামূল্যে বোতলজাত পানি // Sparoon

বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের পানির বোতল পাওয়া যায়৷ আমরা যাত্রাপথে কিংবা অনেক কারণে বিশুদ্ধ পানির যোগান এর জন্য এসব পানির বোতল কিনে থাকি৷ বোতলের সাইজ ও ব্র্যান্ডের ভিত্তিতে এগুলোর দাম বিভিন্ন হয়ে থাকে৷ একটা অর্ধলিটার পানির বোতল ক্রয় করতে আমরা ১০-১৫-২০ টাকা পর্যন্ত খরচ করে থাকি৷ আবার অনেকক্ষেত্রে এর থেকেও দামী পানির বোতল বাজারে পাওয়া যায়৷ কিন্তু কেমন হবে যদি আমাদের কে আর এধরণের পানির বোতল কিনতেই না হয়? আমরা বোতলজাত বিশুদ্ধ পানি পাব তাও আবার বিনামূল্যে! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও বর্তমান সময়ে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ আর জনপ্রিয় হবেই না কেন এতে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ভোক্তাগণ বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন যা টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে না৷ খুব শীঘ্রই বাজারে দেখা মিলবে এধরণের ফ্রি পানির বোতল এর৷

বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ (Mizu, Freeflow, Magna) এই বিনামূল্যে পানির বোতল সরবরাহ মাধ্যমে ব্যবসা করছে৷ তো তাদের বোতল গুলো কেন তারা বিনামূল্যে দিচ্ছে? পানি কি বিশুদ্ধ? বা তাদের এতে যা খরচ হচ্ছে, বিনামূল্যে দেওয়ায় তারা তা থেকে মুনাফা কীভাবে উপার্জন করছে? এ সব গুলোর উত্তর আজকে আমরা জেনে নিব৷

“দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের” মতে কভিড প্যান্ডেমিক পর্যন্ত বাংলাদেশে বোতলজাত পানি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি লিটার৷ যার বাজার মূল্য প্রায় ১০০০ কোটি টাকার মত৷ অনুমান করা হচ্ছে এই বাজারের মূল্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ২০০০ কোটি টাকার আশপাশে।

এই বিনামূল্যে বোতলজাত পানি সরবরাহের ধারণা প্রথম বাজারে নিয়ে আসে “Free Water Corporation” ২০১৫ সালের দিকে৷ এই কোম্পানিটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ এরপর ২০১৬ সালে FreePani নামে আরও একটি কোম্পানি স্টার্ট হয় পাকিস্তানে৷ আর বাংলাদেশে এই ধারণা নিয়ে আসে ২০২৩ এর নভেম্বর এ “MIZU”।

বাজারে ৫০০ মিলির একটি পানির বোতল কিনতে গুনতে হয় প্রায় ২০ টাকা৷ সেখানে এই কোম্পানি গুলো আপনাকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করছে কীভাবে?
তারা মূলত বোতলের গায়ে যেখানে লেবেলিং করা হয় সেজায়গায় একটি বিজ্ঞাপন এর স্পেস ক্রিয়েট করে থাকে৷ ও বিভিন্ন কোম্পানি কে সেখানে বিজ্ঞাপন দিতে আমন্ত্রণ জানায়৷ এবং বোতলের সংখ্যা ও বিজ্ঞাপন এর ধরণের উপর ভিত্তি করে তারা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কোম্পানি গুলো থেকে গ্রহণ করে৷ আর এভাবেই তারা মূলত তাদের খরচ মেটায় এবং মুনাফা উপার্জন করে। অর্থাৎ তারা যেই পানিটি সরবরাহ করে তা শতভাগ বিশুদ্ধ।

এই স্টার্টআপগুলো মূলত দুইভাবে এই কাজটি সম্পন্ন করে থাকে৷ একটি হলো কোম্পানির চাহিদা মত বোতল উৎপাদন করে তাদের বিজ্ঞাপন সহ কোম্পানি গুলোকে পৌছে দেয়, সেখান থেকে কোম্পানি গুলো নিজেদের গ্রাহকদের কাছে তা হস্তান্তর করে৷ আরেকটি মাধ্যম হলো, স্টার্টআপ গুলো তাদের নিজস্ব সরবরাহ চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় তা বিতরণ করে৷
এর একটি বড় ব্যবহার দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ কিংবা স্কুলে কোন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষা বা সেমিনারে শিক্ষার্থীদের কে বিনামূল্যে পানি সরবরাহ করে যার লেবেলের গায়ে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন (কোন সহশিক্ষা কার্যক্রম কিংবা সহায়ক বই এর বিজ্ঞাপন) প্রদর্শিত হয়৷

তবে বিশেষজ্ঞ দেরমতে এধরণের ব্যবসায়িক মডেলে যেসকল স্টার্টআপ ব্যবসা করে তারা বেশি দিন মার্কেটে টিকে থাকতে পারবে না৷ এর কারণ স্পষ্ট, বাজারে ইতিমধ্যে বেশ অনেকগুলো পানির সুপ্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড রয়েছে৷ তারা প্রতিনিয়ত অনেক টাকা খরচ করছে বাজারে টিকে থাকার লড়াইয়ে৷ সেখানে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের ব্র্যান্ডগুলে কতদিন টিকে থাকতে পারবে? বা বাজারের খুচরা দোকানে প্রতিটি বোতলে যেই মুনাফা অর্জন হয় তার সমান মুনাফা দেওয়া এ কোম্পানি গুলোর জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তার থেকেও বোতল জাত পানি পান করার সময় আমরা বোতলের লেবেলে বেশি একটা লক্ষ্য করি না বললেই চলে৷ সেখানে তাহলে কোম্পানি গুলো কি বিজ্ঞাপন দিতে উৎসাহী হবে? বা এধরণের বোতলে কি সবধরনের কোম্পানির বিজ্ঞাপন মানুষ ভালোভাবে গ্রহণ করবে? যেমন যেসকল কোম্পানির প্রোডাক্ট খাবার যোগ্য না বরং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ব্যবহৃত হয় তাদের বিজ্ঞাপন কি এধরনের বোতলে কার্যকর হবে? কিংবা বাজারে যেই পানির বোতল কিনতে ২০ টাকা খরচ হয় যখন তা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে সবাই কি নিঃশঙ্কোচে তা গ্রহণ করবে? এধরনের প্রশ্ন এসকল স্টার্টআপ এর জন্য থেকেই যায়৷ তবুও এই মার্কেটিং কৌশলটি কিন্তু আসলেই দুর্দান্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *