বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং এর জগতে কনটেন্ট রাইটিং ( content writing ) অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক অনলাইন এডুকেশনাল প্লাটফর্ম ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কনটেন্ট রাইটিং এর কোর্স করিয়ে থাকে৷ আবার Freelancer বা Fiverr এর মত বড় বড় ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলো তে কনটেন্ট রাইটিং এর উপর প্রচুর কাজ ও রিমোট জব পাওয়া যায়৷ আজকে আমরা এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখব৷ নিচের কনটেন্ট টেবিল থেকে লিস্ট টি দেখে নিতে পারেন৷
তো চলুন শুরু করা যাক কনটেন্ট রাইটিং এর আদ্যোপান্ত সম্পূর্ণ বিনামূল্যেঃ
কনটেন্ট রাইটিং কি?
কনটেন্ট রাইটিং মূলত বিভিন্ন মাধ্যমের জন্য তথ্যবহুল কনটেন্ট বা উদ্দীপক লিখার এক শিল্প। এটি কেবল শব্দের ব্যবহারে লিখা কোনো রচনা নয়৷ বরং এটি নির্দেশ করে আপনি কীভাবে শব্দের প্রয়োগে আপনার দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষন করতে পারবেন। সহজ কথায়, আমরা অনলাইন এ কোন ওয়েবসাইট এ বা ব্লগে যেসকল লিখিত আর্টিকেল পড়ে থাকি সবগুলোই কনটেন্ট রাইটিং এর আওতায় পড়ে৷ ইউটিউব ভিডিও এর জন্য ডেসক্রিপশন লিখা, কিংবা কোনো প্রোডাক্ট এর বিবরণী কিংবা পোস্টের ক্যাপশন লিখার জন্য মার্কেটপ্লেস গুলোতে কনটেন্ট রাইটার দের হায়ার করে থাকে৷ কনটেন্ট রাইটিং বলতে মূলত লিখালিখি বুঝালেও এটি শুধুই লিখালিখি না৷ বরং বিষয়টি বুঝে তার উপর রিচার্স করে একটি বিস্তারিত বিষয়কে সুন্দর করে সংক্ষেপে কীভাবে আপনি ফুটিয়ে তুলতে পারবেন তার উপরই কনটেন্ট রাইটিং এর সফলতা নির্ভর করে৷ আর এই একটি কারণেই মার্কেটপ্লেস এ বায়ার রা হাজার হাজার ডলার খরচ করে থাকেন৷
কনটেন্ট রাইটিং কেন শিখা দরকার?
কেন শিখবেন কনটেন্ট রাইটিং? কোন কিছু শিখার আগে যদি জেনে নেওয়া হয় যে আপনি বিষয়বস্তুটি কেন শিখবেন তাহলে সেটি শিখার ক্ষেত্রে সহজ হয়৷ কেননা আপনি জানেন কেন শিখবেন৷ তাই একটা গুরুত্ব থাকে যে আপনার এজন্য শিখতে হবে৷ কনটেন্ট রাইটিং মূলত দুটি কারণে শিখা প্রয়োজন- একটি হলো এর সূযোগ সুবিধা ও ওপরটি হলো ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করার জন্য।
কনটেন্ট রাইটিং এর সুবিধা কি?
কনটেন্ট রাইটিং এর সুবিধা হলো:
১. বৈচিত্র্যময় সূযোগ: কনটেন্ট রাইটিং শিখলে আপনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর কনটেন্ট লিখতে পারবেন৷ তা হতে পারে টেক বা প্রযুক্তিগত কিংবা ভ্রমণ বিষয়ক৷
২. এসইও (SEO) বুস্টিং: আপনি যদি অনলাইন এ কনটেন্ট পাবলিশ করে থাকেন কিংবা এমন জব করেন যা অনলাইন এ কনটেন্ট পাবলিশ এর সাথে জড়িত তাহলে তার এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর জন্য কনটেন্ট রাইটিং স্কিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৩. ডিজিটাল মার্কেটিং: ডিজিটাল মার্কেটিং এর একটি অন্যতম শাখা হলো কনটেন্ট রাইটিং৷ তাই এর মাধ্যমে আপনি ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিভিন্ন শাখায় উপকৃত হতে পারেন৷ যেমন: সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে কাজ৷
৪. নিজেকে প্রকাশ: এছাড়াও কনটেন্ট রাইটিং শিখে আপনি অনলাইন এ বিভিন্ন মাধ্যমে বা ব্লগে নিজেকে প্রকাশ করতে পারেন৷
৫. কনটেন্ট রাইটিং এর ফলে আপনি নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে অবগত হবেন ও নতুন বিষয়বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবেন।
কনটেন্ট রাইটিং এ ফ্রিল্যান্সিং করে আয়:
কনটেন্ট রাইটিং এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলোতে। Freelancer, Seoclark, Upwork, Fiverr সহ বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস এ আপনি কনটেন্ট রাইটিং শিখে, সেগুলোয় একাউন্ট খুলে কনটেন্ট রাইটিং এর উপর কাজ করে আয় করতে পারেবেন৷ যা আপনি ফুলটাইম বা পার্টটাইম পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারবেন।
কনটেন্ট রাইটিং কীভাবে করবেন?
প্রথমত যে বিষয়ের উপর আপনি কনটেন্ট টি লিখতে চাচ্ছেন তা নির্বাচন করতে হবে ও সেটলে স্পেসিফিক একটি টাইটেল দিতে হবে৷ তারপর আপনি বিভিন্ন লিখার সফটওয়্যার এর সহায়তা নিতে পারেন লিখার জন্য। যেমন: মাইক্রোসফট ওয়ার্ড। অনেকের কম্পিউটার বা পিসির কিবোর্ড এ লিখতে সমস্যা হয়। তাদের জন্য আমার সাজেশন থাকবে, আপনি চাইলে মোবাইল ফোন এর নোট ব্যবহার করতে পারেন কিংবা মোবাইল এর ওয়ার্ড সফটওয়্যার টি৷ সেখানে কনটেন্ট লিখে তারপর কম্পিউটার এ মেইল করে নিয়ে নিতে পারেন৷ শুধু লিখলেই কনটেন্ট রাইটিং সাকসেস হয়ে ওঠে না। আপনাকে কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে:
১. রিসার্চ /গবেষণা: সর্বদা মনে রাখতে হবে লিখার আগে পড়তে হবে৷ অর্থাৎ আপনাকে কনটেন্ট রাইটিং এর পূর্বে সেই কনটেন্ট নিয়ে গবেষণা করতে হবে৷ এটি কি বিষয়ের উপর লিখতে হবে, বা আপনার দর্শক বা পাঠকগণ কোন বিষয়টি জানতে চাচ্ছে এসব আগে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে৷ তারপর লিখতে হবে যেটি সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে।
২. একটি রূপরেখা তৈরী করুন: লিখার আগেই একটি পরিকল্পনা করুন কনটেন্ট টির উপর৷ কিভাবে লিখবেন, কি কি বিষয় থাকা জরুরী ও কি কি বিষয় রাখছেন। সেগুলো আপনাকে একটি সুনির্দিষ্ট গতি দিবে কনটেন্ট রাইটিং এ।
৩. প্রথম থেকেই দর্শক বা পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করুন৷ আকর্ষণীয় ভূমিকা পাঠকদের পুরো কনটেন্ট পড়তে আগ্রহী করে তোলে।
৪. পুরো লিখাটি কথোপকথন এর ধাঁচে লিখলে পাঠকরা বেশি আগ্রহী হয়৷ ধরুন আপনি লিখাটি লিখার সময় এমনভাবে লিখকেন যে কারো সাথে কথা বলে বলে লিখছেন৷ যেমন আমাদের এই লিখাটি।
৫. বার বার লিখাটি রিভিশন দিতে হবে, এতে কোনো প্রকার ভুল আছে কিনা তা পর্যালোচনা করতে হবে৷ তারপর লিখাটি সাবমিশন করতে হবে৷
কনটেন্ট এ ছবি ও ইনফোগ্রাফিক্সের ব্যবহার
একটি কনটেন্ট কে আকর্ষণীয় করতে ছবি ও ইনফোগ্রাফিক্সের ব্যবহার অনেক গুরুত্বপূর্ণ৷ ইনফোগ্রাফিক্স ডিজাইন আমরা এডোবি ইলাস্ট্রেটর দিয়ে করতে পারি৷ আর ছবির জন্য, ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া কিছু সাইট আছে, যেমন: পিক্সেল, আনপ্লাশ, ফ্রিপিক৷ সেখান থেকে আপনার কাঙ্ক্ষিত ছবিটি ফ্রি-তে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। তবে ছবি কনটেন্ট এ ব্যবহার এর সময় অবশ্যই মূল ফটোগ্রাফারের ক্রেডিট দিয়ে দিবেন৷ যেটা ডাউনলোড করার সময় Attribute হিসেবে পাবেন।
কীভাবে কনটেন্ট লিখে ফরম্যাটিং করবেন?
কনটেন্ট লিখার থেকে এর ফরম্যাটিং খুবই জরুরি। এবং আপনি কীভাবে তা লিখেছেন সেটিও জরুরী।
১. হেডিং /সাবহেডিং: কনটেন্ট এর মূল বিষয়বস্তু কে বা টাইটেল শিরোনাম কে হেডিং দিয়ে লিখুন৷ অর্থাৎ তা একটু বড় হবে৷ হেডিং এর জন্য H2 বা H3 ব্যবহার করতে পারেন৷ আর তার একটু সাব টাইটেল বা বিষয়বস্তুর অভ্যন্তরের বিষয়বস্তর শিরোনাম কে সাবহেডিং দিয়ে লিখুন৷ H4 বা H5 ব্যবহার করতে পারেন সাবহেডিং হিসেবে।
২. প্যারাগ্রাফ: মূল বর্ণনামূলক লিখাটিকে পারাগ্রাফ বলা হয়৷ প্যারাগ্রাফট এর দৈর্ঘ্য বেশি বড় করা ঠিক হবে না৷ আর ফন্ট সর্বদা সাধারণ বা যেগুলো বুঝতে সুবিধা সেগুলো ব্যবহার করা উচিত। যেমন Arial, Sherif এর ফন্ট গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে৷ দরকার অনুসারে বোল্ড ও ইটালিক ব্যবহার করতে হবে।
৩. বুলেট ও লিস্ট: কোনো লিস্ট দিলে তা অবশ্যই বুলেট বা নাম্বার লিস্ট করে দিলে সহজেই বোধগম্য হবে।
৪. যেকোনো বহুমুখী তথ্যের জন্য টেবিল ব্যবহার করা যেতে পারে৷
৫. হাইপারলিংকের ব্যবহার করতে পারেন৷ বিভিন্ন আইটলিংক বা ইনলিংকের ব্যবহার কনটেন্ট টিকে এসইও ফ্রেন্ডলি করে থাকে৷
৭. প্রথম প্যারাগ্রাফ এর শুরুতেই ছবির ব্যবহার করতে পারেন৷ দুইয়ের অধিক ছবির ক্ষেত্রে সঠিকস্থানে ব্যবহার করতে হবে৷
৮. Quotes এর ব্যবহার করলে আকর্ষণীয় হয় কনটেন্ট।
৯. কনটেন্ট রাইটিং যেহেতু কনটেন্ট মার্কেটিং এরই একটি অংশ তাই এতে সঠিক কল-টু-একশন বাটন ব্যবহার করতে হবে৷ সঠিল কল-টু-একশন এর ব্যবহার সঠিক জায়গায় করলে আপনার টার্গেট অডিয়েন্সকে আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন৷
কি-ওয়ার্ড রিসার্চ ও প্ল্যানিং:
কনটেন্ট রাইটিং এ কিওয়ার্ড অনেক ভালোভাবে রিসার্চ করে লিখতে হবে৷ কেননা এই কি ওয়ার্ড সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে সামনের পৃষ্ঠায় আসতে সহায়তা করে। এবং প্যারাগ্রাফ লিখার সময় এর ধারাবাহিকতার উপর লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এছাড়াও কন্টেন্ট কে কীভাবে ভয়েস সার্চ অপটিমাইজড করা যায় তা দেখুন এখানে ক্লিক করে৷
এসইও (SEO)
সার্চ ইঞ্জিনে ফলাফল আসার জন্য কনটেন্ট এর এসইও অনেক জরুরী৷ এসইও কীভাবে করে? মূলত লিখাটিকে এমন ভাবে লিখতে হয় যা মানুষ সার্চ করে, বা যা মানুষ বেশি জানতে চায় তার উপর ভিত্তি কটে কনটেন্ট এর টাইটেল, মেটা ডেসক্রিপশন ও প্যারাগ্রাফগুলো লিখতে হয়৷ সে অনুযায়ী স্লাগ লিখতে হয়৷
এখন আসি কীভাবে কাজ পাবেন?
মার্কেটপ্লেস গুলোতে একাউন্ট খুলে কাজের জন্য ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে কনটেন্ট রাইটিং এর জন্য সার্চ করলেই অনেক কাজ পেয়ে যাবেন৷ যেখান থেকে আপনাকে সেগুলো বিড করতে হবে৷ অথবা ফাইভার এর মত মার্কেটপ্লেস গুলোয় আপনি চাইলে নিজের কাজের উপর গিগ পাবলিশ করতে পারবেন৷ মার্কেটপ্লেসের বাহিরে অনেক জায়গায় রিমোট জবে পার্টটাইম বা ফুলটাইমার হিসেবে কনটেন্ট রাইটার নিয়োগ নিয়ে থাকে৷ সেখানে কাজ করেও আপনি আয় করতে পারেন৷ এজন্য LinkedIn বা bdjobs এ আপনি দেখতে পারেন।
ওয়েবসাইট এর ব্লগ লিখার ক্ষেত্রে কনটেন্ট রাইটিং এর উপরের ফরম্যাট এবং ধাপগুলোই অনুসরণ করতে হবে৷ আশা করি কনটেন্ট রাইটিং সম্পর্কে আপনাকে একটি পরিষ্কার ধারণা আমরা দিতে পেরেছি৷ তারপরও বিস্তারিত জানতে বা কিছু বুঝতে না পারলে সেটি নিয়ে গুগুল বা ইউটিউব এ সার্চ করে অনেক বিনামূল্যের রিসোর্স পেয়ে যেতে পারেন৷
এই লেখার বেশ অনেক জায়গায় অনেক ইংরেজি শব্দের বঙ্গানুবাদ করা হয় নি যাতে করে আমাদের পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হয়৷ এসব প্রচলিত ইংরেজি শব্দের বঙ্গানুবাদ বোধগম্য নাও হতে পারে।