ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২.০

© Resources from FreePik // Edited by Sparoon

বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং এর এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং (Influencer Marketing)। তো ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বলতে আসলে কি বুঝায়?

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং (Influencer Marketing) কাকে বলে?

ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং হলো এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যেখানে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের (ইনফ্লুয়েন্সারদের) ব্যবহার করা হয় একটি ব্র্যান্ড বা পণ্যের প্রচারণার জন্য। এই ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের বৃহৎ এবং সক্রিয় অনুসারীদের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার সম্পর্কে ইতিবাচক পর্যালোচনা, রিভিউ এবং পরামর্শ প্রদান করে, যা ওই ব্র্যান্ড বা পণ্যের প্রতি মানুষের আস্থা ও আগ্রহ বাড়ায়। ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং মূলত ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিক্রয় বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়।

তবে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বলতে আমরা বুঝি বড় বড় সেলিব্রিটিদের দিয়ে বিজনেস এর প্রচারণা, কিন্তু বড় সেলিব্রিটিদের দিয়ে বিজনেস এর প্রচারণা অনেক ব্যয়বহুল, যা অনেক নতুন বিজনেস এর পক্ষে এত টাকা খরচ করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই আজকে আমরা নিয়ে এসেছি “ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২.০“। যেখানে আগে বড় বড় সেলিব্রিটি বা ম্যাক্রো-ইনফ্লুয়েন্সাররা মার্কেটিং প্রচারে প্রধান ভূমিকা পালন করত, সেখানে এখন মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। নতুন বিজনেস বা স্টার্টআপ গুলোও এই নতুন ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং মডেলকে তাদের মার্কেটিং কৌশলে অন্তর্ভুক্ত করছে। এর ফলে কম খরচে একটি বিশাল মার্কেট কে আপনি কেপচার করতে পারবেন। ১০ লাখ টাকা খরচ করে এক জন বড় ইনফ্লুয়েন্সার কে হায়ার না করে ৫লাখ টাকা বা তারও কম টাকায় ৩-৫ জন মাঝারি লেভেলের ইনফ্লুয়েন্সারদের হায়ার করে আপনি সেই একই পরিমাণ প্রমোশন করতে পারেন। তাহলে আপনি কেন আপনার বিজনেস এ “ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২.০” এপ্লাই করবেন না?
আজকের “ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২.০” এ আমরা মূলত কথা বলব মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ে। তো প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সার কারা?

মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সার কারা?

মাইক্রো-ইনফ্লুয়েন্সার সাধারণত তারা যাদের সোশ্যাল মিডিয়ায় ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ অনুসারী(followers) রয়েছে কিংবা এর সমপরিমাণ অনুসারী বা ফেনবেস (যেমনঃ গ্রুপ) নিয়ে কাজ করে। অন্যদিকে, ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের অনুসারীর সংখ্যা ১,০০০ থেকে ১০,০০০ এর মধ্যে থাকে। এদের অনুসারীর সংখ্যা কম হলেও, এদের অনুসারীদের সাথে তাদের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ এবং প্রভাবশালী।

মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রভাব

১. বিশ্বাসযোগ্যতা: মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সাররা তাদের অনুসারীদের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলতে সক্ষম। তাই তাদের প্রদত্ত পরামর্শগুলো তাদের অনুসারীদের মাঝে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়।
২. অভীষ্ট গ্রাহক (Target Audience): এরা একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি নিয়ে কাজ করে, যেমন বিউটি, ফ্যাশন, ট্রাভেল, ফিটনেস ইত্যাদি। তাই প্রমোশন এর সময় নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য সঠিক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানো সহজ হয়।
৩. খরচ কম: বড় বড় সেলিব্রিটিদের তুলনায় মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে কাজ করলে অনেক কম খরচ হয়, যা নতুন এবং ছোট ব্যবসার জন্য উপযোগী।

মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করার উপায়

১. প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট তৈরি: ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করে কন্টেন্ট তৈরি করা যায় যা তাদের অনুসারীদের জন্য প্রাসঙ্গিক এবং আকর্ষণীয়। যেমন, প্রোডাক্ট রিভিউ, আনবক্সিং ভিডিও, টিউটোরিয়াল ইত্যাদি।
২. সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা: ইনফ্লুয়েন্সাররা সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার করতে পারে, যার ফলে তাদের অনুসারীরা সরাসরি প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে পারে।
৩. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: ইনফ্লুয়েন্সারদের একটি নির্দিষ্ট কোড বা লিঙ্ক দেওয়া যেতে পারে, যা তাদের অনুসারীরা ব্যবহার করে পণ্য কিনলে ইনফ্লুয়েন্সাররা কমিশন পাবে। এটি উভয়ের জন্যই লাভজনক হতে পারে।
৪. ইভেন্ট বা ক্যাম্পেইন: বিভিন্ন ইভেন্ট বা ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সারদের যুক্ত করা যেতে পারে, যা ব্র্যান্ডের সাথে তাদের সম্পর্ক আরও মজবুত করবে এবং তাদের অনুসারীদের মধ্যে ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াবে।

সঠিক কৌশল ও ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন

মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে সঠিক কৌশল ও ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণা আরও কার্যকরী এবং লাভজনক হতে পারে। নিচে কিছু ধাপ উল্লেখ করা হল যা আপনাকে সঠিক কৌশল ও ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করতে সাহায্য করবে।
১. লক্ষ্য নির্ধারণ করুনঃ
প্রথমেই আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনার মার্কেটিং প্রচারণার লক্ষ্য কী। যেমন: ব্র্যান্ড সচেতনতা বৃদ্ধি করা, প্রোডাক্ট বিক্রি বাড়ানো, ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধি করা এবং নির্দিষ্ট ক্যাম্পেইনের প্রচারণা করা।
২. টার্গেট অডিয়েন্স চিহ্নিত করুনঃ
আপনার পণ্যের অভীষ্ট গ্রাহক কারা? তাদের বয়স, লিঙ্গ, অবস্থান, আগ্রহ এবং আচরণ কেমন? এ তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে আপনি এমন ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করবেন যার অনুসারীদের আপনার টার্গেট অডিয়েন্সের সাথে মিল আছে।
৩. ইনফ্লুয়েন্সারের কন্টেন্ট স্টাইল বিশ্লেষণ করুনঃ
ইনফ্লুয়েন্সারদের কন্টেন্ট স্টাইল আপনার ব্র্যান্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা যাচাই করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বিউটি প্রোডাক্ট বাজারজাত করতে চান, তাহলে বিউটি ব্লগার বা মেকআপ আর্টিস্টদের সাথে কাজ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৪. ইনফ্লুয়েন্সারের অনুসারী সংখ্যা এবং এনগেজমেন্ট রেট পরীক্ষা করুনঃ
মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের অনুসারী সংখ্যা কম হলেও তাদের এনগেজমেন্ট রেট (যেমন লাইক, কমেন্ট, শেয়ার) সাধারণত বেশি হয়। এনগেজমেন্ট রেট চেক করতে পারেন তাদের সাম্প্রতিক পোস্টের এনগেজমেন্ট দেখে।
৫. ইনফ্লুয়েন্সারের পূর্বের কাজ পর্যালোচনা করুনঃ
ইনফ্লুয়েন্সারদের পূর্বের কাজ বা ক্যাম্পেইন পর্যালোচনা করুন। তাদের কন্টেন্ট কেমন ছিল, তারা কোন ব্র্যান্ডের সাথে কাজ করেছে এবং সেই ক্যাম্পেইনের ফলাফল কেমন ছিল তা বিশ্লেষণ করুন।
৬. সম্পর্ক তৈরি করুনঃ
ইনফ্লুয়েন্সারদের সাথে একটি পেশাগত সম্পর্ক তৈরি করুন। তাদের ইমেইল করুন, স্পন্সরের অফার দিন। তাদের সাথে খোলামেলা যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ করুন। একটি সুসম্পর্ক গড়ে তুললে তারা আপনার ব্র্যান্ডের প্রচারণায় আরও আগ্রহী ও প্রতিশ্রুতিশীল হবে।
৭. কন্ট্রাক্ট এবং শর্তাবলী স্পষ্ট করুনঃ
ইনফ্লুয়েন্সারের সাথে কাজ করার আগে একটি স্পষ্ট কন্ট্রাক্ট তৈরি করুন যেখানে কাজের শর্তাবলী, পেমেন্ট স্ট্রাকচার, ডেলিভারি টাইমলাইন এবং অন্যান্য বিষয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। এতে ভুল বোঝাবুঝি এবং অনাকাঙ্কিত সমস্যার সম্ভাবনা কমবে।
৮. ফলাফল পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণ করুনঃ
প্রচারণা শেষে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইনের ফলাফল বিশ্লেষণ করুন। এটি আপনাকে ভবিষ্যতে আরও ভালো কৌশল প্রয়োগ করতে সাহায্য করবে। ট্র্যাকিং টুল ব্যবহার করুন, যেমন গুগল অ্যানালিটিক্স, সোশ্যাল মিডিয়া ইনসাইটস ইত্যাদি।
সঠিক কৌশল এবং ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করলে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ক্যাম্পেইন অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে। উপরের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের জন্য সঠিক ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করতে পারবেন এবং সফলভাবে আপনার প্রচারণা চালাতে পারবেন।

মাইক্রো এবং ন্যানো-ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে নতুন ব্যবসাগুলো সহজেই তাদের অভীষ্ট গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং কম খরচে সফল মার্কেটিং প্রচারণা চালাতে পারে। সঠিক কৌশল ও ইনফ্লুয়েন্সার নির্বাচন করলে, “ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং ২.০” আপনার ব্যবসার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *