ইমেইল মার্কেটিং বর্তমান সময়ে একটি অত্যন্ত কার্যকরী কৌশল যা টার্গেটেড কাস্টমার গ্রুপের কাছে আপনার ব্যবসা বা প্রোডাক্টের ইমেইল পাঠানোর মাধ্যমে সরাসরি একটি ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে৷ আজকের এই লিখায় আমরা দেখব ইমেইল মার্কেটিং কি, এটি আপনাকে কি কি সুবিধা দিতে পারে এবং কথা বলব কেন এটি আপনার ব্যবসার জন্য দরকার বা কেন আপনার ইমেইল মার্কেটিং করা প্রয়োজন। এবং সবশেষে কীভাবে আপনি আপনার প্রোডাক্ট বা ব্যবসার একটি কার্যকরী ইমেইল মার্কেটিং করতে পারেন তা বর্ণনা করব৷ এবং এটিকে একটি বাস্তবিক উদাহরণ এর সাথে বর্ণনা করব যাতে আপনাদের বুঝতে সহজ হয়৷
ই-মেইল মার্কেটিং
ইমেইল মার্কেটিং হলো আপনার এবং আপনার প্রোডাক্ট এর সম্ভাব্য কাস্টমার বা আপনার বর্তমান কাস্টমার এর সাথে একটি ব্যাক্তিগতকৃত এবং সরাসরি যোগাযোগ মাধ্যম।
ই-মেইল মার্কেটিং এর সুবিধাসমূহ
১. অডিয়েন্স টার্গেটিং: আপনি ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার সুনির্দিষ্ট স্থানের, মনমানসিকতার ও মানুষদের কাছে সহজেই পৌঁছাতে পারবেন।
২. পণ্যের প্রচার: আপনি খুব সহজেই ইমেইল এর মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে যেকোনো প্রোডাক্ট নির্দিষ্ট ভাবে ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে প্রচারণা চালাতে পারবেন।
৩. কাস্টমার ইঙ্গেজমেন্ট: আপনি কাস্টমার এর সাথে খুব সহজেই ইন্টারেকশন বাড়াতে পারবেন।
৪. ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা: আপনি খুব সহজেই আপনার অডিয়েন্সকে আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানানের মাধ্যমে ব্র্যান্ড একটি ইমেজ তৈরী করে ফেলতে পারেন।
৫. ক্রয়বিক্রয় সম্পর্ক: একজন কাস্টমার কে ক্রয়বিক্রয় চ্যানেলে বারবার সম্পৃক্ত করে আপনি অধিক মুনাফা উপার্জন করতে পারেন৷
কেন ই-মেইল মার্কেটিং ব্যবহার করব
১. কম খরচে প্রমোশন: ই-মেইল মার্কেটিং একটি কস্ট-ইফেক্টিভ মাধ্যম। কম খরচে অন্যান্য যেকোনো গতানুগতিক মার্কেটিং পদ্ধতি থেকে আপনি ইমেইল মার্কেটিং করতে পারবেন
২. পার্সোনালাইজেশন: আপনি আপনার মার্কেটিং কে নিজের মত করে সাজাতে পারবেন সুনির্দিষ্ট কাস্টমার এর জন্য সুনির্দিষ্ট মার্কেটিং এর কনটেন্ট তৈরী করতে পারবেন।
৩. সর্বোচ্চ বিনিয়োগ প্রতি লাভ: যদি সঠিক ভাবে আপনি ইমেইল মার্কেটিং করতে পারেন তাহলে ROI (বিনিয়োগ প্রতি লাভ) আপনি সর্বাধিক অর্জন করতে পারেন।
৪. সরাসরি সম্পর্ক: ইমেইল মার্কেটিং এ আপনি কাস্টমার এর সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন।
৫. পরিমাপযোগ্যতা: আপনি ইমেইল মার্কেটিং ব্যবহার করে কতটুকু সফলতা পেয়েছেন তা সহজেই পরিমাপ করতে পারবেন, যেটা গতানুগতিক মার্কেটিং পদ্ধতি যেমন বিলবোর্ড এর ক্ষেত্রে সম্ভব না।
কীভাবে ই-মেইল মার্কেটিং শুরু করা যায়?
তাহলে কীভাবে আপনি ইমেইল মার্কেটিং শুরু করতে পারেন চলুন তা জেনে নেওয়া যাক:
১. আপনার ইমেইল লিস্ট তৈরী করুন:
আপনি ইমেইল অনেকভাবে আপনার কাস্টমার এর থেকে সংগ্রহ করতে পারেন৷ যেমন সোশাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট (সাইন আপ), ফর্ম সাবমিশন, সার্ভে, কাস্টমার কোন প্রোডাক্ট কিনার পর তার থেকে তথ্য সংগ্রহের সময় ইমেইল সংগ্রহ করে কিংবা ইমেইল দিয়ে প্রথম বার কেনাকাটায় কোনো অফার দিয়ে।
২. একটি ইমেইল মার্কেটিং প্লাটফর্ম নির্বাচন:
সচরাচর আমরা গুগুল এর জিমেইল বা ইয়াহু সহ নানা প্রকার মেইলিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করে থাকি অন্য জনকে ইমেইল করতে৷ কিন্তু ইমেইল মার্কেটিং এ আপনি অটোমেট ইমেইল জেনারেশন, কাস্টমার এর এপ্রোচ বুঝার জন্য বা অন্যান্য আরও এক্সট্রা সুবিধা পেতে কিছু প্রফেশনাল মেইল মার্কেটিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন৷ যেমন: Mailchamp, Sendinblue ইত্যাদি।
৩. কাস্টমার এর গ্রুপ তৈরী করুন:
লোকেশন, লিঙ্গ, মনমানসিকতার উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার ইমেইল লিস্টটিকে বিভিন্ন সেগমেন্টে ভাগ করে নিন৷ যাতে করে সুনির্দিষ্ট কনটেন্ট সুনির্দিষ্ট কাস্টমার এর কাছে পাঠাতে পারেন।
৪. একটি যুক্তিসংগত ইন্টারফেস তৈরী করুন:
ইমেইল এর কনটেন্ট ও লিখাগুলোকে যুক্তিসংগত উপায়ে সাজান৷ সঠিক কনটেন্ট ও সঠিক কল-টু-একশন (CATs) বাটন ব্যবহার করুন৷
৫. ডিজাইন:
ডিজাইন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা কাস্টমার কে আকৃষ্ট করে৷ তাই এর দিকে নজর দিন৷ সর্বদা ক্লিন, সিম্পল ডিজাইন করবেন যা কাস্টমার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে পাশাপাশি খুব সহজেই যেন বুঝতে পারে। নজর রাখবেন ইমেইল যদি html দিয়ে ডিজাইন করে থাকেন তাহলে সেটি রেসপন্সিব কিনা।
৬. কিছু অটোমেশন ফিচার সেট করুন:
ইমেইল এ প্রোডাক্ট সরাসরি অর্ডার করার জন্য কোনো বাটন বা লিংক দিতে পারেন৷ পাশাপাশি তার রিপ্লাই এ কাস্টমার কিছু দিলে সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে কোনো ফিরতি অটোমেটেড ইমেইল কনভারসেশন তৈরী করে রাখতে পারেন।
৭. নিয়মিত পরিদর্শন:
ইমেইল মার্কেটিং এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হলো আপনি যে ইমেইল গুলো কাস্টমার কে দিচ্ছেন সেগুলোর উপর কাস্টমার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে, অর্ডার করছে নাকি কি রিপ্লাই দিচ্ছে তা নিয়মিত চেক করুন৷ ও কাস্টমার এর রিপ্লাই এর জবাব দিয়ে একটি সুসম্পর্ক স্থাপন করুন।
৮. লক্ষ্য রাখুন কাস্টমার যেনো বিরক্ত না হয়:
কাস্টমার কে ইমেইল পাঠানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন কোনো কারণে তার জন্য এটি বিরক্তিকর না হয়৷ যেমন একদিনে বার বার ইমেইল না পাঠানো, কিংবা ইমেইল এর কনটেন্ট এ এমন কিছু ব্যবহার না করা যা কাস্টমার এর বিরক্তির কারণ হতে পারে৷
চলুন একটি প্রোডাক্ট এর ইমেইল মার্কেটিং করি। ধরুন আপনি একটি স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট লঞ্চ করলেন৷ এবার এই প্রোডাক্ট সম্পর্ক আপনার ওয়েবসাইট, গুগুল কিংবা মেটায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কল টু একশনে ইমেইল এ কনভার্ট করে নিতে পারেন৷ কিংবা আপনার পূর্বে সংগৃহীত ইমেইল লিস্ট থেকে একটি কাস্টমার গ্রুপকে নির্বাচন করে নিতে পারেন৷ এক্ষেত্রে আপনি চাইলে গুগুল ক্রোম ওয়েব ব্রাউজার এ ব্রাউজার এক্সটেনশন ইনস্টল করে নিতে পারেন কিংবা অনেক ধরণের পেইড সফটওয়্যার পাওয়া যায় যেখানে লোকেশন বেসড্ সুনির্দিষ্ট কাস্টমারের ইমেইল সংগ্রহ করতে পারেন৷1 তারপর একটি সুন্দর ভাবে ইমেইল ডিজাইন করতে হবে৷ প্রথমেই প্রোডাক্ট এর পরিচয়, এর স্বাস্থ্য উপকারিতা, কেন এটি ব্যবহার করা দরকার, কেন কাস্টমার এর জন্য এটি প্রয়োজন তা বর্ণনা করুন৷ তারপর এর স্টক লিমিটেশন, অফার সম্পর্কে কাস্টমারকে অভিহিত করুন৷ যেমন এই স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট টি স্টকে রয়েছে মাত্র রয়েছে মাত্র ৫০০ পিস৷ তাই স্টক ফুরাবার আগেই সংগ্রহ করার পরামর্শ দিন৷ অথবা এর রেগুলার দাম রয়েছে ৫০০ টাকা একে লঞ্চ অফারে ৪৪৯৳ তে বিক্রি করা হচ্ছে সীমিত সময়ের জন্য৷ তারপর প্রোডাক্ট এর একটি সুন্দর ছবি ব্যবহার করুন৷ তারপর একটি সরাসরি লিংক বা কল টু একশন বাটন দিন যেখানে ক্লিক করে খুব সহজেই কাস্টমার প্রোডাক্ট টি পেতে পারে৷ বেশ এবার নিচে আপনার ব্র্যান্ড সিগনেচার দিয়ে পাঠিয়ে দিন ইমেইল। তারপর সেই ইমেইল এর ফিরতি রিপ্লাই বা কাস্টমার এর পরবর্তী এপ্রোচ এর জন্য অপেক্ষা করুন৷ বারবার একই ইমেইল, একই কাস্টমারকে পাঠানো থেকে বিরত থাকুন৷
ইমেইল মার্কেটিং এমন একটি টুল যা আপনাকে অনেক ভাবে ব্যবসায় সহায়তা করতে পারে৷ তাই ইমেইল মার্কেটিং সঠিক ভাবে আপনার ব্যবসার জন্য প্রয়োগ করুন৷
[আর্টিকেল এর অনেক জায়গায় আমরা ইংরেজি শব্দের বাংলায় উচ্চারণ লিখেছি, এর কারণ স্পষ্ট যেন মার্কেটিং এর বিভিন্ন টার্ম বাংলায় লিখলে পাঠকদের বুঝতে সমস্যা না হয়৷ প্রমোশন এলার্টের জন্য আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো মাধ্যম আপনাকে সাজেস্ট করছি না৷ তারপরেও যেকোনো সমস্যায় কিংবা চাইলে আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিতে পারেন।]